পরনে বোরকা মুখে নেকাব ৫০ ঊর্ধ্ব এক নারী ফার্মগেটের ফুটপাথে আধা শোয়া অবস্থায় ভিক্ষা করছেন। কবে থেকে ভিক্ষা করছেন। এ প্রশ্ন করতেই জানান, ১৫ রোজা থেকে। নিয়মিত ভিক্ষুক নন তিনি। শুধু রমজান মাসেই ভিক্ষা করেন। এ মাসে মানুষ দান খয়রাত বেশি করেন আয় রোজগারও ভালো হয়।
পরিচিত মানুষ যেন চিনতে না পারে এ কারণে নেকাব পরে ভিক্ষা করছেন বলে জানান তিনি। প্রতি বছর রমজানকে টার্গেট করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নতুন ভিক্ষুক আসতে শুরু করে রাজধানীতে।
বিভিন্ন রাস্তা, ফুট্ওভার ব্রিজ, মসজিদ, মার্কেটের সামনে দেখা যায় এসব নতুন ভিক্ষুক। ছয় বছরের কবির খালি গায়ে ভিক্ষা করছে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের রাস্তায়। দশ রমজানে ঢাকায় এসেছে সে। বাড়ি ময়মনসিংহ। কার সঙ্গে ঢাকায় এসেছো প্রশ্ন করলে কবির জানায় মামার সঙ্গে। মামা কইছে ঢাকায় চল ঈদে নতুন জামা কাপড় কিনা দিবো। কবীরে হাতের মুঠোয় কতগুলো ভিক্ষার টাকা।
এখানে কত টাকা আছে জানতে চাইলে কবির বলে জানি না। আমি টাকা চিনি না। সব টাকা নিয়া মামারে দিমু। রহিমা মুন্সীগঞ্জ থেকে ভিক্ষা করতে এসেছে তিন দিন আগে। ছোটবেলায় একটি হাত আগুনে পুড়ে গেছে। কাওরান বাজারের আন্ডারপাশের সামনে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করছে।
পোড়া হাত দেখিয়ে ভালোই আয় রোজগার হয় তার। রহিমা জানায়, শুধু রমজান মাসেই ভিক্ষা করতে ঢাকায় আসে সে। বাকি সময়টা বাড়িতেই থাকে। তবে ঢাকায় নতুন ভিক্ষুকদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কারণ নতুন ভিক্ষুকদের ঈর্ষা করে পুরনোরা।
রহিমা জানায়, যারা অনেকদিন থেকে ঢাকায় ভিক্ষা করে তারা নতুন ফকিরদের জায়গা দিতে চায় না। বসতে গেলে দূর দূর করে। রহিমার পোড়া হাত দেখে মানুষ মায়া করে বেশি ভিক্ষা দেয়। এটি সহ্য করতে পারে না পুরান ভিক্ষুকরা। এ কারণে সে বেশিদিন এক জায়গায় বসতে পারে না।
এদিকে সিরাজগঞ্জ থেকে ভিক্ষা করতে এসেছেন ষাট বছরের অজিফা। তার একটা পা চিকন হয়ে গেছে। রোজার শুরুতে তার এক এলাকার ভাই তাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। গ্রিনরোড এলাকায় ভিক্ষা করেন তিনি। অজিফা প্রতিদিন তিন থেকে চারশ’ টাকা ভিক্ষা পান।
অজিফা বলেন, রমজান মাসে মানুষ যত ভিক্ষা দেয় এমনি সময় মানুষ এত ভিক্ষা দেয় না। এ কারণে শুধু রমজান মাসেই ঢাকায় ভিক্ষা করতে আসেন তিনি। ঈদের সময় ঢাকা শহর ফাঁকা হয়ে যায়।
মানুষও ভিক্ষা দিতে চায় না। এ সময় ঢাকায় থাকলে আরো খরচ। তাই প্রতি চাঁদরাতে বাড়ি ফিরে যান অজিফা। আবার সামনের রমজানে ভিক্ষা করতে ঢাকায় আসবেন তিনি।