সংসদে উত্থাপন হয়ে গেল দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেট। গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী এই ভোটের বছরে চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
আর এই নতুন বাজেট নিয়ে আজ শুক্রবার ওসমানি মিলনায়তনে অর্থমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে করেন। এতে বাজেটের যৌক্তিকতা নিয়ে সাংবাদিকদের কয়েকটি প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে রেগে গিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছোড়েন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনি বলেন, ‘কোন মুখে আপনারা বলেন এ দেশে গরিব মারার বাজেট হচ্ছে। আপনারা সাংবাদিকরা যখন জন্মেছিলেন তখন দেশে ৭০ শতাংশ দারিদ্রতা ছিল। আর এখন ২২.৪ শতাংশ।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিক মানিক মুনতাসির অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন- আপনি গত নয়-দশ বছর ধরে বলে আসছেন বৈশম্যহীন, সুখি, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার জন্য আপনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এটা আপনি প্রায়ই বলেন। কিন্তু আপনি এবার যে কর কাঠামো প্রস্তাব করেছেন সেই প্রস্তাবিত কর কাঠামোতে ধনীদেরকে আপনি বেশি সুবিধা দিয়েছেন।
আর মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তদের ওপর আপনি কর এবং ভ্যাটের বোঝা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি ঢাকা শহরে যার দুটো গাড়ি আছে দু’বছর পরে তার তিনটা গাড়ি হয়। কিন্তু যার একটি গাড়িও নেই সারাজীবন সে একটা গাড়িও কিনতে পারে না। তারা উবার এবং পাঠাও এর ওপর নির্ভর করে সাম্প্রতিক সময়ে এক বা দু’বছরে কিছু সুবিধা নিতো, পরিবার পরিজন নিয়ে বাহিরে বের হতে পারতো। আপনি সেখানেও ভ্যাট বসিয়েছেন।
এই জায়গায় আমার প্রশ্ন হচ্ছে- আপনি কী বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, নাকি আপনার এসব কার্যক্রম বৈষম্যকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে কিনা।
এরপর আরেক সাংবাদিক অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করে বলেন, মাননীয় মন্ত্রী আমার ওই যে তেলা মাথায় তেল দেওয়ার বিষয়টা ক্লিয়ার হয় নায়। ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের আপনি বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিলেন। সিআরআর কমিয়েছেন, ডিপোজিট বাড়িয়েছেন, আবার সুদের ট্যাক্স কমিয়েছেন।
কিন্তু আদো কি ব্যাংক ঋনের সুদের হার কমেছে ?
আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করে বলেন, বার বার অনেকেই বলে ফেলছেন এই বাজেটটা ধনী বান্ধব বাজেট আর গরিব মারার বাজেট। সেক্ষেত্রে আমরা দেখছি যে ছোট আকারের ফ্ল্যাটে আপনি ট্যাক্স বসিয়েছেন এবং বড় ফ্ল্যাটে ট্যাক্স বাড়ান নায়। তো এটা কি আসলে গরিব মারা বাজেট কিনা?
এরপর অর্থমন্ত্রী একটু বিবর্তবোধ করে প্রশ্নটি আবার করতে বললে ওই সাংবাদিক আবার প্রশ্নটি করেন।
এরপর এতোসব প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আমি অত্যন্ত দুঃখিত। আপনারা যেসব প্রশ্ন করছেন এগুলো একেবারে মিনিংলেস হয়ে যাচ্ছে। দেয়ার আর সিম্পল স্টেটমেন্ট অব ফলস কোয়েশ্চেন।
অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আপনারা জানেন এখন বাংলাদেশ কী অবস্থানে আছে? এদেশে দারিদ্র বাড়ছে? আমার এ প্রশ্নে জবাব কেউ একজন দিন দেশে দারিদ্র বাড়ছে?
এরপর তিনি বলেন, এদেশে দারিদ্র বাড়ছে না। যে বলে বাড়ছে সে মিথ্যা বলছে। অবশ্যই সে মিথ্যা বলছে। এরপর অনেকটা রাগান্বিত স্বরে অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈষম্য বাড়ে নায়। বাড়ছে অব্যশই কয়জনের জন্য বাড়ছে সেটা আপনারা দেখেন। কতজন দরিদ্র দেশে আছে এখন?
আপনারা এমন সব প্রশ্ন করছেন যা আমার পক্ষে এগুলোর সম্বদ্ধে বলতেও লজ্জাবোধ করে। এরকম কী করে হতে পারে একটা দেশের লোকজন, এই যে সাংবাদিকরা, এতজন সাংবাদিক শিক্ষিত লোক। যারা দেশের পরিবর্তন স্বীকার করে না। বাংলাদেশে এখন ২২.৪ শতাংশ লোক গরিব। যেটা আপনারা যখন জন্ম হয়েছেন তখন সেটা ছিল সত্তর শতাংশ বোঝেন কোথায় ছিল বাংলাদেশ আর কোথায় এখন এসেছে?
কিছুদিন আগে ছিল ৩০ শতাংশ। কোন মুখে আপনারা বলেন এ দেশে গরিব মারার বাজেট হচ্ছে। ধনীকে তেল দেবার বাজেট হচ্ছে। দেশের উন্নয়নের বলেননি। তবে বোঝাতে চাচ্ছেন কিছুই হয়নি। আই এম সরি ফর মেকিং দিজ স্টেটমেন্ট।