মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকায় জামায়াতের ক্ষমা চেয়েও লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন শিবিরের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, জামায়াতের ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বলেছেন, ক্ষমা চাইলেও ক্ষমা করা হবে না। এই যে বাধা, এই বাধা থেকে বের হয়ে আসা ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। একটি জাতীয় ঐক্যের জন্য এই বিতর্কটি শেষ হওয়া এবং প্রতিপক্ষকে সুযোগ দেওয়া উচিত। আমাদের কষ্টটা হচ্ছে, আমরা এই জায়গায় ঐক্যে পৌঁছতে পারছি না।
সম্প্রতি নাগরিক টিভি’র টকশোতে তিনি এসব কথা বলেন।
মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ক্ষমা চাওয়ার কথা যখন আসে, তখন যে কথাটি প্রথমই আসে সেটা হলো দোষ। জামায়াত কি আদৌ কোনো দোষ করেছিলো? এ প্রসেঙ্গ জামায়াতের কাছে আমার দাবি ছিলো, ভুল হয়েছে কি না এটা নির্ধারণ করেন। যদি ভুল না হয়ে থাকে, তাহলে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন আসে না। আর যদি ভুল করে থাকেন, তাহলে ক্ষমা চাওয়ার বাধাটা কোথায় চিহ্নিত করেন। ব্যারিস্টার রাজ্জাক ক্ষমা চাওয়ার কথা তুলেছেন।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যথাসময়ে দলে পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেন সাবেক এই নেতা। তার মতে, পরিবর্তনশীল মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময়মতো পরির্তন না আনলে পরবর্তীতে পরিবর্তন করেও কোনো লাভ হয় না। দলের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল কামরুজ্জামান পরিবর্তন প্রসঙ্গে যে কথাগুলো বলেছিলেন, আজ সে কথাগুলো উঠে আসছে। আজ আমরা যেটা বলেছি, সেটা একসময় গুরুত্ব পাবে। তবে পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা প্রসঙ্গে মঞ্জু বলেন, রাজনীতির জায়গা থেকে জামায়াত ব্যাখ্যা দিয়েছে, মুসলিম জাতীয়তাবাদী ঘরানার পাকিস্তানকে তারা ভাঙতে চায়নি। পাশাপাশি জামায়াতের আরেকটি ভয় ছিলো, ভারত এখানে সুবিধা নিচ্ছে। জামায়াতের মতে, ভারতের অতীত ইতিহাস বলছে, তারা কখনো আমাদের বন্ধু হতে পারে না। এরকম একটি আশংকা থেকেই তারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিলো। তবে এক্ষেত্রে জামায়াতের বক্তব্য হচ্ছে, পাকিস্তানের অন্যায়-অত্যাচারের সহযোগিও তারা ছিলো না।
শিবিরের সাবেক এই নেতা বলেন, আমি দেখেছি, একটি রাজনৈতিক দলের মোকাবেলায় আদর্শ এবং যুক্তি অনিবার্য। কিন্তু জামায়াতকে নিয়ে যে প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছে, তাতে মনে হয় যেনো মূল দল জামায়াতই ছিলো। সব দায়ভার যেনো জামায়াতের।
জামায়াত নির্মূলের রাজনীতি শুরু হওয়ার কারণে জামায়াত এক ধরণের সহানুভুতিও পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এত বিরোধ এবং এত চাপের ভেতরেও জামায়াতের জনসমর্থন বেড়েছে। কারো বিরুদ্ধে যখন প্রোপাগান্ডা বেশি হয়ে যায়, তখন অনেকের সমর্থন তার পক্ষে চলে যায়। সেটাই হয়েছে। মানবতাবিরোধী বিচার প্রক্রিয়াটাও সুন্দর হয়নি বলে মন্তব্য করেন সাবেক শিবির সভাপতি।
তিনি বলেন, ৭১ নিয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে যে প্রোপাগান্ডা, এটা অন্যায়। পাশাপাশি জামায়াত এ বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে চাচ্ছে না বা পারছে না এটাও তাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা বলে মনে করেন শিবিরের সাবেক এ নেতা।