জ. হাসান
কোন এক স্ত্রী দোতলার বারান্দা থেকে নীচে দাড়ানো তার স্বামীকে বলল, ওগো বাজার থেকে ১টা বড় দেখে হাঁস কিনে আনো। নীচে দাড়ানো স্বামী বললো, কি বলো বাঁশ আনবো বড়ো বাঁশ? আসলে রাস্তার শব্দে স্বামী বেচারা বউয়ের হাঁসকে বাঁশ শুনে ফেলেছে। স্বামী বাজার থেকে লম্বা দেখে একখানা বাঁশ এনে নীচ থেকে বউকে বললো, এই নেও, তোমাকে দেওয়ার জন্য অনেক খুজে বড়ো দেখে একখানা বাঁশ এনেছি।
পরের ঘটনা, বউ বাসা ছেড়ে চলে গেল বাপের বাড়ী। আর স্বামী বেচারা রান্না ঘরে।
আপনি যাকে ভুল বুঝলেন, বা ভুল শুনলেন, শুধু তাকে ডুবালেন না, ডুববেন আপনি নিজেও তার সাথে সাথে।
পরিচিত অনেককেই দেখবেন, এমনকি তথাকথিত আইটি বিশেষজ্ঞও ফেসবুক পোস্ট আর ম্যাসেঞ্জারের মেসেজকে এক মনে করে গুলিয়ে ফেলেন।
ফেসবুক একটি সোস্যাল মিডিয়া যেখানে আপনি যা লিখবেন বা ছবি দেবেন সেটাকে পোস্ট বলা হয়। এটি পাবলিক করলে ফেসবুকের সাথে সংশ্লিষ্ট অসংখ্য মানুষ তা দেখতে পারে। আবার রেস্ট্রিক্টেড করা যায় সুনির্দিষ্ট কিছু অডিয়েন্সের জন্য। পোস্টের পক্ষে বিপক্ষে আপনি যা লিখবেন তাকে কমেন্টস বা মন্তব্য বলা হয়। রিয়েক্ট চিহ্ন ও দেওয়া যায়।
কিন্তু মেসেঞ্জার জন্ম থেকেই একটি প্রাইভেট গ্রুপ। এখানে মেম্বার সংখ্যা সীমিত। মেসেঞ্জার ব্যবহার করা হয় আভ্যন্তরীন তথ্য আদান প্রদানের জন্য। কেবলমাত্র গ্রুপের সক্রিয় সদস্যরাই এই মেসেজ দেখতে পারে। এর বাহিরে কারো পক্ষে এখানকার মেসেজ দেখা সম্ভব না।
আপনার দেয়া মেসেঞ্জারের মেসেজকে কেউ যদি ফেসবুকের পোস্ট মনে করে, তাহলে সে বলে বেড়াতে পারে যে ফেসবুকের হাজার হাজার মানুষের নিকট আপনি পজিটিভ বা নেগেটিভ প্রচারণা চালাচ্ছেন। আপনার কাছের মানুষরা যদি মেসেঞ্জার আর ফেসবুকের পার্থক্য না বুঝে তাহলে তাদের বিরূপ মনোভাব ও প্রচারণার শিকার আপনাকে হতে হবে এবং তাদের দ্বারা আপনার ক্ষতি হবে অধিক।
তাছাড়া, কেউ যদি আপনার প্রতি বিরূপ থাকে, সে আপনার ভালো দৃষ্টি আকর্ষনমূলক মেসেজটাকেও বিকৃত করে উপস্থাপন করতে পারে। জেনে বুঝে যিনি বিকৃত বা নেতিবাচক ভাবে উপস্থাপন করছেন, তার উদ্দেশ্য যে খারাপ এটা বুঝতে বাকী থাকে না। আবার কেউ কেউ নিজে প্রচারণা না চালিয়ে তার উচ্চপদস্থ কাউকে দিয়ে মেসেঞ্জারের মেসেজকে ফেসবুকের পোস্ট বলিয়ে প্রচারণা চালায়। শীর্ষ সেই কর্মকর্তা জানতেও পারেন না তিনি ভুল প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং তাকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরী হচ্ছে তার আইটি অ/সচেতনতা নিয়ে।
প্রতিপক্ষ ছাড়াও অজ্ঞতাবশত পক্ষের অনেকেই মেসেঞ্জারের মেসেজকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন বলে আপনার প্রতি অবিচার বা বিদ্বেষমূলক আচরণ করতে পারে।
এমন অবস্থায় কি আপনি মেসেজ দেওয়া বন্ধ করে দিবেন? বন্ধ করলে তো আর তথ্য আদান-প্রদান হবে না।
শিক্ষিত লোকজনকেও মাঝে মাঝে সচেতন করে তুলতে হয়। কেননা, আপনি আজ তাদের অজ্ঞতার কারনে যে ঝামেলায় পরবেন, তারা নিজেরাও একই কারনে আরও ঝামেলায় জড়িয়ে যেতে পারে। তাই অন্যকে সচেতন করাও নিজেকে রক্ষা করার পদ্ধতি হিসাবে গ্রহণ করতে হবে।
আর সচেতন করতে না পারলে, হাঁসের পরিবর্তে তো বাঁশ খেতেই হবে, কখনো একা, কখনো সবাইকে নিয়ে।
মেসেঞ্জারের মেসেজকে ফেসবুকের পোস্ট মনে করে নিজে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না, বা ভুল প্রচারণা করে অন্য কাউকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা ঠিক হবে না। সচেতনতাই এক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি থেকে উভয়পক্ষকে স্বস্তিতে রাখতে পারে।